এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী সাম্প্রতিক আমাবশ্যার জোয়ারের প্রবল চাপে বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতায় দিশেহারা সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষকে রক্ষার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি।
বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, পানিতে ডুবে রয়েছে সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা। লাখ লাখ মানুষ পানির উপর ভাসছে। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, শাকসবজিসহ সবধরণের কৃষি খামার সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহু এলাকায় মানুষের রান্না-বান্না করারও জায়গা নেই। মৃত মানুষের দাফন ও সৎকার করতে এক এলাকা থেকে অপর এলাকায় ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশন, স্যানিটেশন, সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এখন শুধু উপজেলা ইউনিয়ন গ্রাম নয়, পানিতে ভাসছে জেলা শহরে অবস্থিত সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস, বিজিবি ক্যাম্প,সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস, সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা কালেক্টরেটসহ অন্যান্য সরকারি অফিস। শহরের মানুষও পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরপরই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই এই এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করা, দ্রুত বাঁধ নির্মাণসহ সবধরণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। স্থানীয় জনসাধারণ স্বেচ্ছাশ্রমে বড় তিনটি পয়েন্ট ছাড়া আর সকল স্থানে রিংবাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি আটকাতে সক্ষম হয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ বাঁধার সাথে যুক্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল প্রদান করা হয়। কোন কোন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও বাঁশ, বস্তা, পেরেক নিয়ে সহায়তা করা হয় বলে আমরা জেনেছি। কিন্তু স্বেচ্ছাশ্রমে যেনতেনভাবে পানি বন্ধের পর বাঁধগুলো আরও মজবুত করতে আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
এরফলে সাম্প্রতিক অমাবশ্যায় জোয়ারের প্রবল চাপে পূর্বের ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো নতুন করে ভেঙে গিয়ে দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান এবং সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষকে বাঁচানোর আহবান জানান।
এসময় বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, আবুল কালাম আজাদ, সুধাংশু শেখর সরকার, অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অ্যাড. মনির উদ্দিন, অ্যাড. আল মাহামুদ পলাশ, অপারেশ পাল, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, তপন কুমার শীল, সুরেশ পান্ডে, আবুল হোসেন, মুনসুর রহমান, কায়সারুজ্জামান হিমেল, কওসার আলী, আব্দুস সামাদ, মমিন হাওলাদার, আলী নুর খান বাবলু, প্রমূখ।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরাবর সাতক্ষীরাসহ উপকূলবাসীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়।