এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। রাত দিন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চলছে তাদের জীবন। আকাশে কালো মেঘ আর নদীর গর্জন শুনলেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।বেঁচে থাকায় যেন তাদের বড় দায়। উপকূলীয় অঞ্চলে জন্ম নেওয়াটাই যেন তাদের অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বাড়িতে সমুদ্রের লোনা পানি আর নতুন করে রিং বাঁধ গুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় অনেকে এলাকা ছাড়ছে।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেরার প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। সব কিছু হারানো এ মানুষ গুলোর সমস্যার যেন অন্ত নেই। দেখার যেন কেউ নেই। নিজ ঘরে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার টুকুই তারা চেয়েছে সরকারের কাছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিডর, আইলা, বুলবুল কিংবা আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ এলেই কেবল কর্তাব্যক্তিদের তৎপরতা চোখে পড়ে। কিন্তু কোনো রকমে বিপদ কেটে গেলেই ভীতিকর পরিস্থিতির কথা তাঁরা বেমালুম ভুলে যান।
প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাতের পর প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হতে চললো কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় টেকসই উপকূল রক্ষা বাঁধ তৈরির কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কেবল ভেঙে যাওয়া তিনটি স্থানে নামকাওয়াস্তে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের ফাতেমা বেগম ও কেয়া খাতুন জানান, গত ২০ মে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে অন্যান্য পরিবারের মতো তাঁরাও দীর্ঘদিন জোয়ার–ভাটার মধ্যে বসবাস করেছেন চরম দুর্ভোগের মধ্যে। ভাঙ্গন কবলিত দুর্গাবাটি এলাকায় রিং বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মাণ হওয়ার পর তাঁরা ক্ষতবিক্ষত বাস্তভিটায় ফিরেছেন। বিধ্বস্ত ভিটায় দোচালা তুলে বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তু উঁচু টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে আবার তাঁরা গৃহহীন হবেন ছেলেমেয়ে নিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে তাঁদের বংশধরদের পরিচয় ও ঠিকানা হারিয়ে যাবে।
গোলাখালী গ্রামের আবুল হোসেন ও দুর্গাবাটি গ্রামের নীলকান্ত রপ্তান জানান, ষাটের দশকে নির্মিত শ্যামনগরের আওতাভুক্ত ৫ ও ১৫ নম্বর পোল্ডারের জীর্ণশীর্ণ বাঁধ নিয়ে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এ উপজেলায় বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় গোটা এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী কৈখালী, কাশিমাড়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ জনপদ রক্ষা করতে হলে আইলার পর ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ অঞ্চলে টেকসই প্রযুক্তিতে নতুন করে উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর, কৈখালী ইউনিয়নসহ উপজেলায় প্রায় দুইশ কিলোমিটার পাউবোর বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধ অধিকাংশই ষাটের দশকে নির্মাণ করা। বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কাশিমাড়ী, গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা দেখা গেছে,ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাতের পর গোটা উপকূল রক্ষা বাঁধ যেন সরু আইলে পরিণত হয়েছে। গাবুরার তিনটিসহ দাতিনাখালী, দুর্গাবাটি ও কাশিমাড়ীর অংশে রিং বাঁধ নির্মাণ করে আপাতত নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা আটকানো হয়েছে। তবে আবার বড় ধরনের কোনো জলোচ্ছ্বাসে তা নিমিষেই বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সাতক্ষীরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, প্রাথমিকভাবে রিং বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। এখন এসব বাঁধে মাটি দিয়ে দেওয়া হবে। এসব বাঁধ নতুন করে নির্মাণ ও সংস্কার করার জন্য প্রকল্প করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ হবে।