এস,এম,হাবিবুল হাসান :
সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় এক পল্লী চিকিৎসক ওমর ফারুক (৬০) ও রবিউল ইসলাম (৩৫ ) নামে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে সাতক্ষীরায় করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বাকীদের নিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
রবিবার(২৮ জুন) সকালে ও শনিবার(২৭ জুন) রাতে তারা মারা যান।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের মারকা গ্রামের মৃত বাহার আলী গাজীর ছেলে পল্লী চিকিৎসক ওমর ফারুক (৬০) ও তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার বাইগুনি গ্রামের আবুল খায়ের বিশ্বাসের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫ ) ।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ তৈবুর রহমান জানান, পল্লী চিকিৎসক ওমর ফারুক সর্দি, কাশি, জ্বর ও গলাব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে শনিবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন নমুনা পরীক্ষার জন্য। নমুনা সংগ্রহের পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ভর্তি না হয়ে বাড়িতে চলে যান। এরপর রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তার স্বজনরা তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার বাইগুনি গ্রামের রবিউল ইসলাম আজ রবিবার সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাকে আইসোলেশনে নেয়া হয়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পরে তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের তত্বাবধায়ক। তবে, মৃত দুই জনেরই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি বলে তারা জানান।
এছাড়াও,সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ জনের মধ্যে ১১জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এভাবে স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে রোগীদের সেবা দেওয়া নিয়ে চরম সংকটে পড়বে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ। সচেতন মহলের ধারনা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এবং মনিটরিং না থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কয়েকদিনে শ্যামনগর,কলারোয়া, দেবহাটাসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের খবরও রয়েছে।
রবিবার(২৮ জুন) দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে পাওয়া নমুনা রিপোর্টে সাতক্ষীরার ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১৫ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগ।
আক্রান্তরা হলেন, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বজলুর রহমান, জি এন মাসুদুর রহমান, দেলোওয়ার হোসাইন, হাফিজুর রহমান, ডা. রাজিব সরদার, আব্দুল মুজিদ মোল্যা, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শেখ ইব্রাহিম সরদার, ছকিনা খাতুন, কাজি আব্দুল মতিন সরদার, আখিঁ সরদার, দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চন্দ্র শেখর, মুনজিতপুর এলাকার মাসুদ ইকবল, মির্জা রজব আলী, রোকছানা ও মাতিন বিল্লাহ।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের ডা. জয়ন্ত সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এনিয়ে জেলায় আজ পর্যন্ত মোট ১৭৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লক ডাউন করা হয়েছে। টানানো হয়েছে লাল পতাকা।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হোসাইন শাফায়েত বলেন, এটি খুবই দু:খজনক খবর। তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তের কারণ হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে এমন রোগীদের সাথে কাজ করে। এছাড়া হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীরা বিশেষ করে মহিলারা মাস্ক ব্যবহার করে না। তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী থাকলেও তারা আবহাওয়ার কারণে ব্যবহার করতে পারে না। পিপিই পরলেও খোলার সাবধনতা অবলম্বর না করলে আক্রান্ত হতে পারে। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(বিএমএ) সাতক্ষীরা জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, “চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের এভাবে ব্যাপকহারে আক্রান্ত হওয়াটা সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের একটি বড় ব্যর্থতা। তারা আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা বারবার চকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা বলেছি, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে ক্রমাগত স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্টরা আক্রান্ত হতে থাকলে অচিরেই সাতক্ষীরার হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না। তখন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “যেহেতু চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা অপেক্ষাকৃত সচেতন তাই তারা সাধারণ উপসর্গ দেখলেই করোনা সংক্রমিত কিনা তার পরীক্ষা করতে পারছেন কিন্তু প্রতিদিন সাতক্ষীরার অসংখ্য মানুষ করোনর পরীক্ষা করাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পিসিআর ল্যাব না থাকার কারণে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ পরীক্ষা করানোর সুযোগ খুব কম পাচ্ছেন। ঠিকমত পরীক্ষা করা গেলে আও অনেক বেশি মানুষ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হতেন। অবিলম্বে সাতক্ষীরায় করোনা পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সেবার সাথে সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”