বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে লোকবল সংকট ও প্রয়োজনীয় মেশিনের স্বল্পতার কারণে নমুনা জট দেখা দিয়েছে। ১ জুন রাতে গত ২৭ মে’র অর্ধেক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট না মেলায় শুধু জনগণকে নয়; স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে সকলের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। শজিমেকের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তারা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শূন্যপদ পূরণ ও আরো মেশিন দিলে সমস্যার সমাধান হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, গত ১ এপ্রিল বগুড়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলতে শুরু করে। গত ২৯ মার্চ ২৫০ শয্যার বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ১৪০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বগুড়া থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকা ও রাজশাহীর পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হতো। সেখান থেকে ইচ্ছামত সময়ে রিপোর্ট বগুড়ায় আসতো। চাহিদার প্রেক্ষিতে গত ২০ এপ্রিল বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের গবেষণাগারে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন (পিসিআর) ল্যাব চালু হয়। এরপর এ ল্যাবে বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, গত ১ এপ্রিলের পর এ জেলায় মোট ছয় হাজার ৮২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পিসিআর ল্যাব থেকে পাঁচ হাজার ৩৮৮ জনের নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। এ থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন, ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৯১ জন, নারী ৮২ জন ও শিশু ১৯ জন। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান সঞ্চয় জানান, বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবে পাঠানো নমুনার সঠিক সময়ে রিপোর্ট না আসায় শুধু জনগণ নয়; তাদেরও দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি জানান, ১ জুন রাতে ৩৫ জন পজিটিভসহ যে ১৮৮ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে তা মূলত: গত ২৭ মে পাঠানোর নমুনার অর্ধেক। এ ল্যাবে সংকুলান না হওয়ায় সম্ভবত কিছু নমুনা ঢাকাতেও পাঠানো হয়েছে। রোববার রাতে আইসোলেশনে মৃত অন্ত:সত্ত্বা নারীর নমুনার রিপোর্ট মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে তিনি নেগেটিভ না পজিটিভ তা জানা সম্ভব হচ্ছেনা। নওগাঁর বদলগাছি উপজেলায় বাড়িতে ওই নারীর মরদেহ দাফনে বাধা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে চারজন শিক্ষকের স্থলে মাত্র একজন রয়েছেন। তাই অন্য বিভাগ থেকে লোকবল এনে ল্যাবের কাজ চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, একদিকে লোকবল কম অন্যদিকে মেশিন মাত্র একটি। এ মেশিনে দু’শিফটে ৯৪টি করে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে। অথচ পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ৩৫০টির অধিক নমুনা আসে। অধ্যক্ষ জানান, গত ২৭ মে ছাড়াও এর পরের কিছু রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ ও মেশিন বৃদ্ধি করলে এ সংকট দূর হবে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।