দ্বীন মোহাম্মাদ সাব্বির:
পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া মোট বিদেশী রোগীর ৪৫ শতাংশ বাংলাদেশী।উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আটকা পড়েছে বাংলাদেশীরা।করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য ভারত লক ডাউন ঘোষণা করায় দেশে ফিরতে পারছে না অনেক বাংলাদেশী।
এদিকে চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ নিয়ে যাওয়ায় তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে অর্থ সংকট, থাকার সমস্যা ও অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার মত নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীরা। অনেকের আবার পরিবারের একমাত্র উপাজনক্ষম মানুষটিও আটকে আছে ভারতে। দুশ্চিন্তার দিন পার করছেন দেশে থাকা পরিবার পরিজনসহ সকলেই।
আটকে পড়া বাংলাদেশীদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে, গত ৩রা মার্চ সিরাজগঞ্জ থেকে একসাথে ভারতে চিকিৎসা নিতে যান আট জন, এর মধ্যে দুইজন মহিলা ও একটি শিশুও রয়েছে। এরা হলেন মোঃ সাইফুল ইসলাম খান, মোঃ আমিনুল মুমিনিন খান, মো: তপন শেখ, মোছাঃ ঝর্ণা খাতুন, মোঃ একরামুল হক, মোঃ দেলোয়া হোসেন, মোছাঃ মোনোয়ারা বেগম ও শিশুটি হলো রহিমা খাতুন(6)। ভারত সরকারের করোনা প্রতিরোধে নানা কর্মসূচীর কারনে অনেক আগেই দেশে ফেরার কথা থাকলেও আর দেশে ফিরতে পারেনি তারা।
সিরাজগঞ্জ জেলার মোঃ সাইফুল ইসলাম খান।পেশায় জেলা জজ আদালতের সেরেস্তাদার। বেশকিছুদিন যাবৎ নানা শারিরীক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত ৩রা মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই শহরের ভেলরে Cristiano Medical College (CMC) তে যান ।
মুঠোফোনে কথা হলে সাইফুল ইসলাম খান জানান, আমি বেশ কিছুদিন আগে আমার ব্রেন স্ট্রোক হয়, অনেকদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। এবারও ভারতের চেন্নাইয়ে এসেছি চিকিৎসার জন্য। বাংলাদেশে ফেরার জন্য টিকেট সংগ্রহ করলেও আবার সেটি বাতিল করতে হয়েছে।তিনি আরও জানান, আমরা জানি ভারতে করোনা সংক্রমনের হার তুলনামূলক বেশি, তাই আমরাও করোনা সংক্রমণ ঝুকিতে আছি। এছাড়া খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপত্তা ঝুকিতে আছি আমরা। এবং তাদেরকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ঠ মহলের কাছে অনুরোধ জানান।
আমিরুল মুমিনিন নামে আরেকজন বলেন, আমরা দেশে ফেরার জন্য ট্রেন ও বিমানে টিকেট কাটার চেষ্টা করেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারনে আবার তা বাতিল করতে হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চ আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। অল্পদিনের থাকা এবং চিকিৎসার জন্য যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম তাও ফুরিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, এখানে সব মিলিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের। আমরা খুব অসহায়ের মত জীবন যাপন করছি।
এ বিষয়ে মোঃ সাইফুল ইসলাম খানের স্ত্রী (বাংলাদেশে অবস্থানরত) জানান, তিনি অসুস্থ হওয়ায় পর থেকে আমাদের মনের অবস্থা ভালো ছিল না। উন্নত চিকিৎসার জন্য সাইফুল ইসলাম কে ইন্ডিয়ার চেন্নাইের ভেলোরে পাঠাতে সিদ্ধান্ত হলো । সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের জন্য দেশে আসার আগেই লকডাউন দেওয়া হয়েছে। পরিবারের কর্তা এই মহামারীর মধ্যে বাসায় নেই, ছেলেমেয়েদের মলিনমুখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজে মনবল হারিয়ে ফেলছি ।দুশ্চিন্তায় দিনের পর দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের। আর কতদিন আটকে থাকবে ওদের বাবা।এসময় তিনি, উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে আটকে পড়া তাদের সবাইকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।