জিয়াউদ্দিন লিটন: স্টাফ রিপোর্টার : “খা -খা -খা -খা, বক্ষিলারে খা, কাঁচা ধইরা খা …………” কিংবা “সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই” মেঠোপথ ধরে ভেসে আসা বেদেদের চিরচেনা এই সুর এখন আর শোনা যায় না বললেই চলে।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এই ডিজিটাল যুগে এসব সুর এখন আর সাধারণ মানুষকে নাড়া দেয় না । ফলে বিষধর সাপ নিয়ে খেলা দেখাতে আসা বেদে বেদেনীরা এখন অসহায় জীবন যাপন করে। সাপের খেলা দেখিয়ে পেট চলে না তাদের। এইসব বেদেরা এখন বড় সড়কের পাশে কিংবা হাট বাজারের পাশে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করে। সেখান থেকেই সাপ খেলা দেখানোর পাশাপাশি বেদেনীরা তাবিজ কবজ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এ বাড়ি ওবাড়ি গ্রামের মেঠোপথে। গ্রাম থেকে শহরে।
বেঁচে থাকার সংগ্রামে আজ তাদের ভিন্ন পথে চলতে হচ্ছে। তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। যারা এ পেশায় রয়েছেন তাদের জীবন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এমনই দৃশ্য চোখে পড়ল শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের একটি এলাকায়। ঠিকানাবিহীন পথে চলা একটি বেদে বহর এসেছে শেরপুরের রণবীর বালা ঘাটপার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। তাবু ফেলেছে সেখানে শুকিয়ে যাওয়া নদীর চরে। একটির সঙ্গে আরেকটি ঘর এ যেন ওদের চিরচেনা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বহরে বসবাস করছে দশ টি পরিবার। তাবু ফেলেছে ১১ টি। কথা হয় এই বহরের সরদার মোহাম্মদ শাহানুর সরকারের (৪৫) সাথে। তিনি বলেন পেটের দায়ে জীবিকার জন্য অতি কষ্টে নিজ বাড়ি ছেড়ে পুরো বহর সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আমাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা খারিয়া ইউনিয়নের কুমারভোগ গ্রামে। মুন্সিগঞ্জ থেকে এসে এরই মধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় আমরা থেকেছি। মুন্সিগঞ্জ থেকে লালমনিরহাট হয়ে বগুড়ার শেরপুরে। এক-দেড় মাস থাকব হয়তো এখানে।
কর্মক্ষেত্রের উপরে নির্ভর করে কোন কোন জায়গায় আমরা এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত থাকি। আগে বাপ-দাদার নৌকাতেই বসবাস করতাম এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য আমরা বছরের ছয় মাস বাড়ীর বাহিরে সমতল ভূমিতে থাকি । তারপর বাড়িতে ফিরে চার-পাঁচ মাস পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করি। সরদার আরো জানায় ফুলবাড়ি এলাকায় খেলা দেখাতে যেয়ে দুশো টাকা আয় হয়েছে। দিনদিন আয়-রোজগার কমে যাচ্ছে তাই পেশাও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
আগে আমার দলভুক্ত ৫০ টি পরিবার ছিল। আয় রোজগার করতে না পেরে অনেক পরিবারই অন্য পেশায় চলে গেছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে জীবন চালাতে হয়। সর্দার আরো জানান সাপের খেলা দেখিয়ে তাবিজ কবজ বা চুড়ি, ফিতা, আলতা বিক্রি করে এখন আর পেট চলে না। কেউ দিচ্ছে বিভিন্ন রোগের ঝাঁড় ফুক, কেউ দিচ্ছে তাবিজ কবজ, আবার কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি হাজির হচ্ছে শাড়ি চুড়ি আলতা সহ বিভিন্ন প্রসাধনী নিয়ে। আবার কেউবা হাট-বাজারে হাজির হচ্ছে ভানুমতির খেলা জাদু-টোনা নিয়ে। এভাবেই চলছে তাদের জীবনযাত্রা।