ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়া’র প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত আদমদীঘিতে হেরোইন সহ এক নারী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার সাতক্ষীরা ট্রাক ট্রাকংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের একপেশে ও পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ নওগাঁয় বহুল আলোচিত যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন জয়পুরহাট আক্কেলপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক ট্রাক্টর চালক নিহত হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পালিত হল সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস পালিত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে প্রতিবেশীর মতো: বগুড়ায় সারজিস আলম আদমদীঘি সাঁওইল হাটবাজারে শীতবস্ত্র বেচাকেনা জমতে শুরু করেছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নোতি পেলেন শিবগঞ্জের ইউ এন ও আদমদীঘি উপজেলা প্রশাসন ও কলেজ শিক্ষকদের মাঝে প্রীতি ভলিবল টুর্ণামেন্ট

শ্রমিক অধিকার আদায় ও মে দিবস

জিয়াউল হক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট:
  • আপডেট সময় : ০৯:২৬:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪ ৮৫ বার পড়া হয়েছে

আজ থেকে ১ শত ৩৮ বছর আগে আট শ্রম ঘন্টা’র দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের পাদদেশে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে দিবসের শুভ সূচনা করে গেছেন সেই দিবসই আজকের মহান মে দিবস।

যা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের স্বকৃীত দিন হিসেবে সমগ্র বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে আসছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এই দিবস পালিত হবেই। একসময় শ্রমিকদের দৈনিক ১৮-১৯ ঘন্টা কাজ করতে হতো। গোলামের মতো খাটুনি খেটে মিলতো না ন্যায্য মজুরি। রোগে, শোকে, অনাদারে, অনাহারে থেকে জীর্ণ-শীর্ণ থেকে একরাশ অভিমান নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতো। এটা ছিল তাদের নিয়তি। মানবসভ্যতা বিবর্তন হলেও শ্রমিকদের বিবর্তন তেমন হয়নি।

যতটুকু হয়েছে শুধু নামে। সভ্যতার শুরুতে ছিল গোলাম বা ক্রীতদাস। বর্তমানে যাকে ভদ্র সমাজ নাম দিয়েছে শ্রমিক। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে অদ্যবধি এই শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন, সংগ্রাম, বিদ্রোহ অনেক হয়েছে কিন্তু সমাজের পুঁজিবাদী প্রভুদের অদৃশ্য থাবার তা ধোপে টিকনি। আন্দোলন করতে গিয়ে আত্মাহুতি, হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়েও কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভবও হয়েছে তখনই। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে বহুলাংশে। প্রযুক্তির আগ্রাসন শ্রমিকের পেটে লাথি মেরেছে। পৃথিবীর মানুষ আজ শোষক শোষিত এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। যা হাল সনে মালিক শ্রমিক নামে অভিহিত করলেও অতুক্তি হবে না। তো এই মালিক শ্রেণি শ্রমিকের রক্ত ঘাম শোষণ করে পুঁজিরাজায় পরিনত হয়েছে। যাদের এক-একটা দানবে বললেও খুব বেশি বলা হবে না। এই দানবেরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে করায়ত্ত করে করে রাষ্ট্রীয় কালাকানুন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্রমিক নির্যাতন করেই চলেছে। মালিক পক্ষের এহেন শোষণে নিষ্পেষিত শ্রমিকের ভাগ্য আজ তলানিতে।

আজকে আমরা যেদিকেই তাকাই শুধু অট্টালিকা পর অট্টালিকা নজরে পড়ে। এটা নিসন্দেহে দেশের জন্য সুখের দৃশ্য। কিন্তু আমরা কখনো ভাবি না এই অট্টালিকার প্রতিটি বালুকণার সাথে লেপ্টে আছে এক-একজন বীর শ্রমিকের রক্ত জল করা ঘাম। আর সেই ঘামের তারা সঠিক মূল্য পেয়েছে কি-না?। যদি না পেয়ে থাকে তাহলে এই অট্টালিকা আমাদের কোন কাজ দেবে না। আমরা শুধু তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ করবো না। তাজমহল গড়ার কারিগরদেরও স্বরণ করবো। তাবেই আমরা শ্রমিকদের সম্মান করতে শিখবো মূল্যায়ন করতে শিখবো।

আজকে আমাদের সমাজের এই পুঁজিপতি বুর্জুয়া শ্রেণি যেনতেন উপায়ে পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদ নিজের করায়ত্ত করে রেখেছে। শোষক ও শোষিতের ব্যবধান দিনকে-দিন এমন উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে যে তা কমানো আদৌ সম্ভব কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ। সময় যতো গড়াচ্চে এই ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলছে। সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো পৃথিবীর নিরানব্বই ভাগ সম্পদ এক ভাগ মানুষের কাছে জিম্মি। বাকি নিরানব্বই ভাগ মানুষ এক ভাগ সম্পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। শোষিত শ্রেণি যেকোন উপায়ে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। যার ফলে নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে রানা প্লাজার মতো মরণ ফাঁদে পা দিতে তোয়াক্কা করছে না। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাগর পাড়ি দিয়ে প্রবাস জীবনের ঝুঁকি নিতে পুনর্বার ভাবছে না। এর ফলে কি হচ্ছে প্রতিনিয়ত সাগরে সলিলসমাধি হচ্ছে। প্রটেক্ট বিহীন ক্যামিকেল সহ স্বাস্থ্যহানীকর ঝুকিপূর্ণ পেশায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এক রানা প্লাজা ধসেই একসাথে ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত হয়েছে। নিহত বললে ভুল বলা হবে বলতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে খুন করা হয়েছে। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করে আছে আরো ১ হাজার ১৬৯ হতভাগ্য। আমরা তাজরীন ফ্যাশানের আগুনের লেলিহান শিখার কথা ভুলি নাই। আমরা ভুলি নাই নিমতলিতে ক্যামিক্যাল গুদামের ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা। গার্মেন্টস কল কারখানায় প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। ইলেক্ট্রিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ বুলালেই কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা সামনে চলে আসে।

এসব অগ্নিকাণ্ডে কারা মরে? ওই শ্রমিক শ্রেণিই। আর শ্রমিক মরে বলেই পুঁজিপতিদের টনক নড়ে না। শ্রমিক মরা মানেই একটা মামুলি বিষয়। একটা সংখ্যা মাত্র। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের মানুষ বলে গন্য করে না। স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক অতিবাহিত হতে চলেছে এপর্যন্ত এধরণের কোন দূর্ঘটনার সঠিক বিচার হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

যা হয়েছে তা লোক দেখানোর নামান্তর। অর্থাৎ এই পৃথিবীতে পুঁজিপতি বুর্জোয়াদের সিস্টেমের বাহিরে কিছু করার সুযোগ নেই। সেখানে ১ মে আর শ্রমিকদের আর কতটুকু অধিকার আদায় করে দেবে। এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। এজন্য শ্রমিকেরাও পুঁজিপতির টাকায় এদিন উৎসবের আয়োজন করে। সমাজের বর্তমান সিস্টেমকে ভৎসনা করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ads

শ্রমিক অধিকার আদায় ও মে দিবস

আপডেট সময় : ০৯:২৬:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

আজ থেকে ১ শত ৩৮ বছর আগে আট শ্রম ঘন্টা’র দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের পাদদেশে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে দিবসের শুভ সূচনা করে গেছেন সেই দিবসই আজকের মহান মে দিবস।

যা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের স্বকৃীত দিন হিসেবে সমগ্র বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে আসছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এই দিবস পালিত হবেই। একসময় শ্রমিকদের দৈনিক ১৮-১৯ ঘন্টা কাজ করতে হতো। গোলামের মতো খাটুনি খেটে মিলতো না ন্যায্য মজুরি। রোগে, শোকে, অনাদারে, অনাহারে থেকে জীর্ণ-শীর্ণ থেকে একরাশ অভিমান নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতো। এটা ছিল তাদের নিয়তি। মানবসভ্যতা বিবর্তন হলেও শ্রমিকদের বিবর্তন তেমন হয়নি।

যতটুকু হয়েছে শুধু নামে। সভ্যতার শুরুতে ছিল গোলাম বা ক্রীতদাস। বর্তমানে যাকে ভদ্র সমাজ নাম দিয়েছে শ্রমিক। মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে অদ্যবধি এই শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন, সংগ্রাম, বিদ্রোহ অনেক হয়েছে কিন্তু সমাজের পুঁজিবাদী প্রভুদের অদৃশ্য থাবার তা ধোপে টিকনি। আন্দোলন করতে গিয়ে আত্মাহুতি, হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়েও কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভবও হয়েছে তখনই। কায়িক শ্রমের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে বহুলাংশে। প্রযুক্তির আগ্রাসন শ্রমিকের পেটে লাথি মেরেছে। পৃথিবীর মানুষ আজ শোষক শোষিত এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। যা হাল সনে মালিক শ্রমিক নামে অভিহিত করলেও অতুক্তি হবে না। তো এই মালিক শ্রেণি শ্রমিকের রক্ত ঘাম শোষণ করে পুঁজিরাজায় পরিনত হয়েছে। যাদের এক-একটা দানবে বললেও খুব বেশি বলা হবে না। এই দানবেরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে করায়ত্ত করে করে রাষ্ট্রীয় কালাকানুন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্রমিক নির্যাতন করেই চলেছে। মালিক পক্ষের এহেন শোষণে নিষ্পেষিত শ্রমিকের ভাগ্য আজ তলানিতে।

আজকে আমরা যেদিকেই তাকাই শুধু অট্টালিকা পর অট্টালিকা নজরে পড়ে। এটা নিসন্দেহে দেশের জন্য সুখের দৃশ্য। কিন্তু আমরা কখনো ভাবি না এই অট্টালিকার প্রতিটি বালুকণার সাথে লেপ্টে আছে এক-একজন বীর শ্রমিকের রক্ত জল করা ঘাম। আর সেই ঘামের তারা সঠিক মূল্য পেয়েছে কি-না?। যদি না পেয়ে থাকে তাহলে এই অট্টালিকা আমাদের কোন কাজ দেবে না। আমরা শুধু তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ করবো না। তাজমহল গড়ার কারিগরদেরও স্বরণ করবো। তাবেই আমরা শ্রমিকদের সম্মান করতে শিখবো মূল্যায়ন করতে শিখবো।

আজকে আমাদের সমাজের এই পুঁজিপতি বুর্জুয়া শ্রেণি যেনতেন উপায়ে পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদ নিজের করায়ত্ত করে রেখেছে। শোষক ও শোষিতের ব্যবধান দিনকে-দিন এমন উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে যে তা কমানো আদৌ সম্ভব কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ। সময় যতো গড়াচ্চে এই ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলছে। সবচেয়ে নির্মম সত্য হলো পৃথিবীর নিরানব্বই ভাগ সম্পদ এক ভাগ মানুষের কাছে জিম্মি। বাকি নিরানব্বই ভাগ মানুষ এক ভাগ সম্পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। শোষিত শ্রেণি যেকোন উপায়ে আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। যার ফলে নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে রানা প্লাজার মতো মরণ ফাঁদে পা দিতে তোয়াক্কা করছে না। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাগর পাড়ি দিয়ে প্রবাস জীবনের ঝুঁকি নিতে পুনর্বার ভাবছে না। এর ফলে কি হচ্ছে প্রতিনিয়ত সাগরে সলিলসমাধি হচ্ছে। প্রটেক্ট বিহীন ক্যামিকেল সহ স্বাস্থ্যহানীকর ঝুকিপূর্ণ পেশায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এক রানা প্লাজা ধসেই একসাথে ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত হয়েছে। নিহত বললে ভুল বলা হবে বলতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে খুন করা হয়েছে। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করে আছে আরো ১ হাজার ১৬৯ হতভাগ্য। আমরা তাজরীন ফ্যাশানের আগুনের লেলিহান শিখার কথা ভুলি নাই। আমরা ভুলি নাই নিমতলিতে ক্যামিক্যাল গুদামের ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা। গার্মেন্টস কল কারখানায় প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। ইলেক্ট্রিক, প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ বুলালেই কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা সামনে চলে আসে।

এসব অগ্নিকাণ্ডে কারা মরে? ওই শ্রমিক শ্রেণিই। আর শ্রমিক মরে বলেই পুঁজিপতিদের টনক নড়ে না। শ্রমিক মরা মানেই একটা মামুলি বিষয়। একটা সংখ্যা মাত্র। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের মানুষ বলে গন্য করে না। স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক অতিবাহিত হতে চলেছে এপর্যন্ত এধরণের কোন দূর্ঘটনার সঠিক বিচার হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

যা হয়েছে তা লোক দেখানোর নামান্তর। অর্থাৎ এই পৃথিবীতে পুঁজিপতি বুর্জোয়াদের সিস্টেমের বাহিরে কিছু করার সুযোগ নেই। সেখানে ১ মে আর শ্রমিকদের আর কতটুকু অধিকার আদায় করে দেবে। এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। এজন্য শ্রমিকেরাও পুঁজিপতির টাকায় এদিন উৎসবের আয়োজন করে। সমাজের বর্তমান সিস্টেমকে ভৎসনা করে।