শেরপুরে বন্দর কল্যাণ সংস্থার আয়োজিনে অনুষ্ঠিত হলো দুই শ্রমিকের ছেলে মেয়ের বিয়ে
- আপডেট সময় : ১১:১১:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
আমরাও পারি এ স্লোগানে বগুড়ার শেরপুরে এই প্রথম এক ভিন্ন রকম বিয়ের স্বাক্ষী হলো শেরপুর উপজেলা বাসী।
এক অসহায় শ্রমিকের মেয়ের বিয়ে দিলো হাজারো শ্রমিক। এমন ভিন্ন রকম বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে শেরপরে। বিয়ে পড়ানো হয় মসজিদে। ‘নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। বাড়ি-ঘরও নেই বললেই চলে। পৌরসভার জায়গার ওপর তোলা খুপরি ঘরেই তাদের বসবাস। অর্থের অভাবে পড়াশোনা শিখতে পারিনি তারা।
দুই মেয়ে , এক ছেলেকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতেন দরিদ্র মা- বাবা। এমন পরিস্থিতিতে কখনো ভাবে নাই, এত তাড়াতাড়ি ধুমধামে তাদের ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে । তবে এই আয়োজন দেখে বুঝা গেলো , কথায় আছে যাদের কেউ নেই, তাদের জন্য আল্লাহ আছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের ধুনট মোড় এলাকায় শেরপুর ধনুট বন্দর কল্যাণ সংস্থার জমকালো আয়োজনে।
উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের আন্দিকুমড়া গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন ও মঞ্জুয়ারা বেগমের মেয়ে আঁখি আকতার মনিকা।
বর ওমর ফারুক একই ইউনিয়নের মামুরশাহী গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী ও পারুল বেগমের ছেলের বিয়ের সম্পন্ন হয়।
গায়ে হুলদ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা, তোরণ, কনে ও বরের মঞ্চ, কনে সাজানোর জন্য বিউটিশিয়ান, ভিডিও ধারণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না এই অনুষ্ঠানে।
বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় পাঁচ শতাধিক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তার স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে সংসারে।
এর মধ্যে বেশ কিছুদিন আগেই বড় মেয়ের বিয়ে হয়। অভাব-অনটনের কারণে আঁখি আক্তারের বিয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তয় ছিল ওই পরিবারটি। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার উপদেষ্ঠা মন্ডলী ও নেতারা।
এরপর সংস্থার সভাপতি শওকত খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক রাজু মোল্লা আকরাম হোসেনকে মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে বলেন।
বিয়ের মধ্যস্থতাকারী আবু হানিফ বলেন, সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিয়ের যাবতীয় খরচসহ সব আয়োজন করা হয়েছে। এমনকি স্বর্ণালংকার দিয়ে বর-কনে সাজানো ও সংসারে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সামগ্রী, আসবাবপত্র উপহার দেওয়া হয়েছে।
এটি সম্ভব হয়েছে সংস্থাটির উপদেষ্টা শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জানে আলম খোকা ও বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস কোর্স মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শ্রমিক নেতা আরিফুর রহমান মিলন ও রুহুল আমিন সিটুর জন্য।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ধুনট মোড়ে সংস্থাটির কার্যালয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। একটি কক্ষে দেখা যায় গায়ে হলুদের মঞ্চ ও কনেকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বিউটিশিয়ান। বরের জন্যও প্রস্থুত মঞ্চ। আঁখির বাবা আকরাম হোসেন জানান, কখনো ভাবেননি, তার মেয়ের এত বড় আয়োজনে বিয়ে হবে। এ জন্য শ্রমিক সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেরপুর-ধুনট বন্দর মোটর শ্রমিক কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ¦ জানে আলম খোকা ও উপদেষ্ঠা আরিফুর রহমান মিলন বলেন, স্থানীয় অনেকেই এই মহতি কাজে সহযোগিতা দিয়েছে। তাই তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নবদম্পতির হাতে বকনা বাছুর, ছালগল, থেকে শুরু করে স্বর্ণলংকার, শোকেস, আলমারি, ড্রেসিং টেবিলসহ নগদ টাকাও তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আগামীতে প্রতি বছর ২ জন অসহায় শ্রমিকের মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হবে বলে জানান তারা।