রাজস্ব আদায়ে এগিয়ে থাকা ভোমরা বন্দর নিয়ে চক্রান্ত, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
- আপডেট সময় : ০৬:০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি।সেই সাথে বেড়েছে রাজস্ব আদায়। গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা।ভারতের কলকাতার সাথে ভোমরা স্থল বন্দরের দূরুত্ব কম এবং দূর্নীতির বিরুদ্বে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার কারণে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৯০৭.৫৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে জানান ভোমরা স্থলবন্দর কতৃপক্ষ।সরকারের এই রাজস্ব আয়ে যেখানে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্বির হার ৪৩.৬৭ শতাংশ। দিন দিন রাজস্ব বৃদ্বির কারনে এই বন্দর নিয়ে আবারও চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অপপ্রচার করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।তবে ভোমরা স্থলবন্দরকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের স্মার্ট বন্দরে রুপান্তরিত করতে জমি অধিগ্রহনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। অচিরেই, কাষ্টম হাউজ, শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অনান্য অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ সকল ধরনের পন্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে ব্যবসায়ীরা শুরু করলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে বলে জানিয়েছে কাষ্টম কতৃপক্ষ।
খোঁজখবর ও সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর রুপান্তরিত করা হয়। দীর্ঘ দিন ব্যবসায়ীদের দাবির মূখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যায় দুধ ব্যাতিত আমদানিকৃত সকল পন্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর।
সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাষ্টমস্ ও কলকতার দূরুত্ব বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৫ কিলোমিটার কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দূরুত্ব কম, পন্যপরিবহনে ফুয়েল স্বাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারনে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানি ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পন্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।বিশেষ করে আমদানিকৃত আপেল, আঙ্গুর, আনার, টমেটো, কাঁচামরিচ, পিয়াজ মাছসহ সকল ধরনের পচনশিল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সময় কম লাগায় ব্যবসায়ীরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে ভোমরা বন্দরে। যে কারনে পাশ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুকছেন। এখানে পাশ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের মত ফলের ট্রাক থেকে শুরু করে সকল ধরনের পন্যবাহি ট্রাক ডিজিটাল স্কেলে নিক্ষুত ভাবে পরিমাপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের আহবায়ক হাবিবুর রহমান হবি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বানিজ্যে ভাগ্যখুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভিতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বানিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য সড়যন্ত্র শুরু করেছে। গত ২০ সেপ্টম্বর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরে এ্যানালক স্কেলে ফলের ট্রাকের ওজন কমিয়ে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলে ভূল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে বিভিন্ন ধরনের সড়যন্ত্র শুরু করেছে। ডিজিটাল স্কেলে আমদানিকৃত পন্যের ওজন সঠিক ভাবে পরিমাপ করা হয়। ওজন ফাঁকির কোন প্রশ্নই ওঠে না। এ ঘটনায় ভোমরা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সাতক্ষীরার ভোমরার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরিক্ষণ) বাবলুর রহমান জানান, এ স্থলবন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সকল পন্য পরিবহনের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাষ্টমস্ কতৃপক্ষের সকলের উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। এখানে এ্যানালক পদ্ধতিতে কোন ওজন পরিমাপের সুযোগ নেই। গত ২০ সেপ্টম্বর বিভিন্ন নিউজপোর্টালে ভোমরা বন্দরের ওজন ফাঁকির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ভারত থেকে পিটি-১৩২০১১ নাম্বারের যে ট্রাকে করে ভোমরা বন্দরে আপেল প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। আদেও এই নাম্বারের কোন ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে নাই। বিষয়টি সম্পূর্ন ভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন (ট্রাফিক) জানান, প্রায় ১১শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে স্যান্ড ফিলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সেখানে উন্নতমানের ওয়ারহাউজ,শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অনান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এগুলো সম্পন্ন করা হলে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবস্থা বাণিজ্যে আরোগতি আসবে। বছরের কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের আরও বেশি রাজস্ব বৃদ্বি পাবে।
সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমসের সহকারি কমিশনার মতলেবুর রহমান জানান, অন্তবর্তী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে কাস্টমস প্রশাসন।কোন অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকায় তৈরি হয়েছে ব্যবসাবান্ধব অনুকূল পরিবেশ। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।