বগুড়ার শেরপুরের উপজেলাকে গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা
- আপডেট সময় : ০৯:১৭:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ ১৭৮ বার পড়া হয়েছে
পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে হতো অন্যের আশ্রয়ে বা পথ-ঘাটের ধারে। সেসব ভূমিহীন অসহায় মানুষগুলো এখন তাদের হৃদয়ের গভীরে লুকানো স্বপ্ন বর্তমানে বাস্তবে পরিণত হওয়ায় চোখে-মুখে ও হৃদয়ে আনন্দধারা বিরাজ করছে। দু’চোখে স্বপ্ন ছিল পাকা বাড়িতে বসবাস, আর একটু নিজ নামে জায়গা বা সম্পত্তির। অনেকটা অবাস্তব ছিল অসহায় জীবনে। খুঁজে পেয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ঠিকানা, ফেলছে শান্তির নিশ্বাস। খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ফেললেন ঘর ও জায়গা প্রাপ্ত অনেক ভূমিহীন পরিবার।
বগুড়ার শেরপুরের ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় আলাউদ্দিন, শামছুল হক, আশরাফ আলী, ডলি বেগম সহ একাধিকরা আত্মহারা হয়ে জানান, সন্তান-স্বামী নিয়ে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে অন্যের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকে কোনো রকমে দিনাতিপাত করে আসছি।
দিনমজুরি করে যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরায়, সেখানে পাকাঘর তৈরি করার স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো একজন গরিবদের খবর নিয়ে ঘর তৈরি করে দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ায় এটা আমার জীবনে সেরা উপহার পেলাম।
স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি পাঁকা বাড়িতে ঘুমাতে পারবো। তবে এই ঘরে নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করব, তিনি যেন অনন্তকাল বেঁচে থাকেন, আর এভাবে আমাদেরমতো গরীব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারেন বলে আবেগে আপ্লুতভাবে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা জানান।
আজ ১১ জুন মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫ম পর্যায়ে ১৮ হাজার ৫৬৬ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
এরপরই ৫ম পর্যায়ে উপজেলার ৪৫ জন ভূমিহীনদের বাড়ির চাবি ও দলিল হস্তান্তর করে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ সুমন জিহাদী ।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঘরগুলো হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনী, অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা হলরুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো সুমন জিহাদীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. ইমতিয়াজ হোসেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন, উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহ জামাল সিরাজী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ডা. মোঃ সাজিদ হাসান সিদ্দিকী, শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ওবায়দুর রহমান, আশ্রয়ণ বিষয়ক জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাগণ, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, সাংবাদিকগণ, উপকারভোগীগণ।
এর আগে শেরপুর উপজেলায় গৃহনির্মাণ কার্যক্রমের উপর ভিডিও ক্লিপ্স এবং আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ কার্যালয় থেকে প্রেরিত ভিডিও ক্লিপ্স প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ১৬৩টি, ২য় পর্যায়ে ১৭টি, ৩য় পর্যায়ে ১৪৫টি, ৪র্থ পর্যায়ে ১৭১টি ও ৫ম পর্যায়ে ৪৫টি সহ মোট ৫৪১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেয়া হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে ২ শতক জমিসহ ঘরের কবুলিয়ত দলিল, নামজারি খতিয়ান, রেকর্ড সংশোধনী ফি জমা দানের ডিসিআর, সার্টিফিকেট, দাখিলাসহ ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়।
উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে, তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই, তারা ২ শতাংশ জমি পাবে (বন্দোবস্ত)। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে প্রথম ধাপে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। শেষ ধাপ (৫ম ধাপে) খরচ হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫’শ টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট থাকছে। টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হয়েছে ।