নওগাঁর ধামইরহাটে প্রাচীন স্তম্ভ ও পুরাকীর্তি ভিমের পান্টি অবস্থিত
- আপডেট সময় : ০১:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন একটি স্তম্ভ ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ভিমের পান্টি। এটি উপজেলার ৬নং জাহানপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এই স্থাপনাটি গড়ুর স্তম্ভ- ভিমের লাঠি, ভিমের পান্টি নামে ও পরিচিত। উপজেলার ৬নং জাহানপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর হরগৌরী এলাকায় দেখা যায়। মাঝারি (বেড় ১৭০ মিটার এবং উচ্চতা ১০ মিটার) আকারের ঢিবি। সেখানে ১৪টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। ধামইরহাট উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে মঙ্গলবাড়ী নামের বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে মুকুন্দপুর গ্রামে শ্রী শ্রী হরগৌরী মন্দির ও ভীমের স্তম্ভ অবস্থিত। মঙ্গলবাড়ী থেকে পাকা রাস্তা হয়ে ৪০০ মিটার ইট বিছানো আর বাকিটা মেঠো পথ দিয়ে ভ্যান, রিকশায় যেতে হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০০০ বছর আগে বীরেশ্বর ব্রহ্মচারী নামের এক সাধক এ ঢিবিতে একটি কালো পাথর উৎকীর্ণ মাঝারি আকারের মূর্তি পেয়েছিলেন। তাই তিনি ওই ঢিবির ওপর ছোট আকারের চারটি মন্দির নির্মাণ করে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় ঢিবির ওপর উত্তর-পশ্চিম কোণে ২.৩৯ মিটার ও ৯১ সেন্টিমিটার পরিসরের এক কোঠাবিশিষ্ট একটি পূর্বমুখী স্থাপনা ছিল। ১৯৭৮ সালে ওই ঢিবি থেকে একটি চোকলাতলা কালো পাথরের উমা মহেশ্বর মূর্তি উদ্ধার করে তা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ঢিবির দক্ষিণে ৫৮ সেন্টিমিটার দূরত্বে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা অনুরূপ আরও একটি ভাঙা দেয়াল ছিল। সেই দেয়ালের উচ্চতা ১.২২ মিটার। এগুলোকেই বীরেশ্বর ব্রহ্মচারীর স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে এগুলোর নিদর্শন নিশ্চিহ্ন করে সেখানে নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়। ঢিবির পাদদেশ থেকে চতুর্দিকে তাকালে দেখা যায় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। দূরে একটি উঁচু পাড়ওয়ালা পুকুরও রয়েছে। তবে এ প্রত্নস্থলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক খণ্ড কালো পাথরের পিলার বা থাম্বা। এটির নামই ভীমের পান্টি, যা ঢিবিটি থেকে মাত্র ৮১ মিটার দক্ষিণে ফসলি জমির মাঝখানে সামান্য হেলে সম্পূর্ণ অরক্ষিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ভীমের পান্টি আবার কেউ কেউ কৈবর্ত রাজার ভীমের লাঠি বলে থাকেন। ভীমের লাঠিটি দেখতে অনেকটা মোচার মতো। এ থামের গা অত্যন্ত মসৃণ। পাদমূলে এর বেড় ১.৮০ মিটার, বর্তমান উচ্চতা ৩.৭৯ মিটার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অতীতে এর ওপর একটি বিষ্ণুর বাহন অর্ধ নর ও অর্ধ পাখির মূর্তি বসানো ছিল। কিন্তু বজ্রপাতের আঘাতে সেটি নিশ্চিহ্ন হওয়াসহ পিলার বা থাম্বার মূল অংশের মাঝামাঝি অর্ধেক ভেঙে গেছে। তবে অক্ষত থাকা অংশের ৫৬.৭ সেন্টিমিটার ও ৪৯.৩ সেন্টিমিটার পরিমাপের একটি চতুষ্কোণাকার ওপরের অংশে আজও ২৮ পঙক্তির একটি সংস্কৃত ভাষ্য উৎকীর্ণ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এ পিলার বা থাম্বাটি নাকি বরেন্দ্রর পাল রাজা নারায়ণ পালের মন্ত্রী ভটুগুরুভ ৮৯৬-৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এতে ওই রাজবংশসহ মিশ্র বংশপঞ্জি বর্ণিত রয়েছে। এটি দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় ৯ম, ১০ম বছরের ঐতিহাসিক ভীমের পান্টির সঠিক ইতিহাস উন্মোচন না হওয়ায় এর ইতিহাস যেমন বিলুপ্তির পথে, অন্যদিকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে তার রাজস্ব আয় থেকে। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ‘ এখানে রংপুর অথবা দিনাজপুরের কোনো এক রাজার রাজবাড়ির শাখা ছিল। তার একটা বরকন্দাজ ছিল, পাশের ওই উঁচু ঢিবিটি রাজবাড়ির মতো ছিল। সেই উঁচু ঢিবিতেই ছিল বরকন্দাজের বাসা। পাশেই তাঁদের একটি মণ্ডপ ছিল, বর্তমানে সেখানে মন্দির গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ভীমের পান্টিটি ছিল তাঁদের নিশান। গর্জনে ভীমের পান্টির ওপর এসে বিদ্যুৎ পড়ে। বৃষ্টি থেমে গেলে এসে দেখি, ভীমের পান্টির অর্ধেক অংশ ভেঙে অনেকটা মাটির নিচে দেবে যায়। কিন্তু অবাক করার বিষয়, ভেঙে যাওয়া কোনো অংশ আমি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেনি। ভেঙে যাওয়া অংশ কোথায় গেল, কী হলো, ঘটনাটি আজও সকলের কাছে অলৌকিক মনে হয়।’ ইতিহাসের সাক্ষী ভীমের পান্টিকে নিয়ে এমন অনেক অজানা ইতিহাস রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই থেকে গেছে। যুগের পর যুগ ধরে অযত্নে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঐতিহাসিক ভীমের পান্টির ইতিহাস। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক ভীমের পান্টি।