ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বগুড়ার সান্তাহারে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ একজন গ্রেপ্তার জেলা যুবলীগের আয়োজনে ইফতার বিতরণ আদমদীঘিতে স্বামী স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট মামলায় আরো দুইজন গ্রেফতার আদমদীঘিতে ট্রাকের ধাক্কায় একজন নিহত সিরাজদিখানে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষকদের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ধুনট থিয়েটারের আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বগুড়ায় ঔষধ বাজারে সয়লাব বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান স্যাম্পলে সিরাজগঞ্জে বিশ্ব নাট্য দিবস পালিত মনন সাহিত্য সংগঠনের পাক্ষিক অধিবেশন এবং ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বগুড়ায় সিএনজি চালিত গাড়ির সিলিন্ডার রি-টেস্টিং শতভাগ নিশ্চিত করা সময়েরদাবী গোমস্তাপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত ঝুঁকিপূর্ণ ডাকঘরে আতঙ্কে চলছে ডাকসেবা দীর্ঘ ২৪ বছর অবৈধভাবে চাকুরী করছেন সাতক্ষীরার এ্যাড. আব্দুর রহমান কলেজের ৫ শিক্ষক বগুড়া জেলা ছাত্রদলের কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে ধুনটে ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল গোমস্তাপুরে গভীর নলকূপ স্থাপনে বি এম ডি এর অনিয়ম। যদি জাতিকে, সমাজকে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে সমস্যা গুলো খুঁজে বের করতে হবে-ঠাকুরগাঁওয়ে সারজিস আলম নওগাঁয় আমন ধানের সবুজ ক্ষেত দুলছে কৃষকের স্বপ্ন নওগাঁ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীজন্মগত পঙ্গু মানবেতার জীবনযাপন নওগাঁয় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ নওগাঁয় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবীতে মানববন্ধন কুষ্টিয়ায় যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে বৃদ্ধকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

নওগাঁয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ার নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:৩৮:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪ ৫৭ বার পড়া হয়েছে

নওগাঁ রাণীনগরনন সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল নিয়ে চলছে টানা হেঁচড়া। এনিয়ে শিক্ষকদের চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপিঠটি। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে চলছে টানা হেঁচড়া। বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবরে গেজেটের মাধ্যমে সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এরপর থেকে শুরু হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঝুলছে একাধিক তালা। ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম, আব্দুস সোবাহান মৃধা ও জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। এমন কর্মকান্ডের কারণে অনেক আগেই বিদ্যাপিঠটি তার স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ হারিয়ে ফেলায় দিন দিন বিদ্যালয়টি হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থী ও সুনাম। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নও। অপরদিকে শিক্ষকদের এমন নোংরা যুদ্ধে নির্বিকার হয়ে পড়েছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মো: আবু বকর সিদ্দিক। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিলের ৪তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সোবাহান মৃধা। পরবর্তিতে তৎকালীন সাংসদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আমজাদ হোসেনের বড় ছেলের স্ত্রী জুনিয়র শিক্ষক মোরশেদা ২০১৮ সালের ৫এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ সালের উপনির্বাচনে আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপি নির্বাচিত হলে তার ভাগনী জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ১১তারিখ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত জুন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বটি দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারী ও অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান নয় প্রধান শিক্ষকের চেয়ারটি নিয়ে চাষ হচ্ছে নোংরা রাজনীতির। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বটি সমাধান করে পাঠদানের একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় অভিভাবক ও উপজেলাবাসী। বৈধ কাগজপত্রাদি পর্যালোচনার মাধ্যমে দ্রুত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে জটিলতার নিরসন করে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক পাঠদান ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাণীনগর বাজারের বাসিন্দা ও অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চোখের সামনে যখন দেখি শিক্ষক দ্বন্দ্বের বলি হয়ে প্রিয় বিদ্যাপিঠটির সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন খুবই খারাপ লাগে। রাজনীতি আর ক্ষমতার লোভের শিকার হওয়ার কারণে আজ কোন ভালই আর বিদ্যালয়টির অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে সরকারি হওয়ার আগে কিছু অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টি তার পাঠদানের ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। এমন অবস্থা থেকে যদি দ্রুত স্কুলটিকে উদ্ধার করা না যায় তাহলে এক সময় স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর শূণ্যের কোঠায় চলে আসবে। যদি সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সমস্যা সমাধান না করেন তাহলে স্কুলটিকে বাঁচাতে আমরা অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। শিক্ষক মো: নজরুল ইসলাম জানান  তিনি ১৯৯২সালে অত্র বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০০৪সালের ২৮মার্চ প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনিত হন। এরপর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে একটি মামলার কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর দীর্ঘ ২০বছর আইনী লড়াই শেষে তার পক্ষে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য রায় দেন নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এর বিচারক। গত ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি আদালতের সেই রায়ের কপি বিভিন্ন দপ্তরে দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান করছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তিনি আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহলের দাবীর প্রেক্ষিতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন। সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে বিদ্যালয়টির এমন পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে তার দায়িত্ব গ্রহণের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুস সোবাহান মৃধা বলেন বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদের দ্বন্দ্ব বিদ্যালয়টিকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে। গত জুন মাসের ৪তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের সহকারি পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দূর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মাধ্যমে আমাকে জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বসহ আর্থিক লেন-দেনের ক্ষমতা প্রদান করেন। কিন্তু জোরপূর্বক ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের ভাগনী জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন আমার কাছে দায়িত্বভার বুঝে না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে। আমি বর্তমানে ফেরারী আসামীর মতো বিভিন্ন কক্ষে বসে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিকসহ সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি আরো জানান অধিদপ্তরের আদেশ পাওয়ার পর সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উম্মে তাবাসসুম গত ১০জুলাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে একাধিকবার শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীনকে নির্দেশনা প্রদান করলেও তিনি দায়িত্বভার বুঝে না দেওয়ায় এই পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার জনাব মো: আব্দুস সোবাহান মৃধার কাঝে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করলেও আজ পর্যন্ত শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন তা পালন করেননি বরং পারভীন বিদ্যালয়টি নিয়ে নোংরা ষড়যন্ত্র করেই চলেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া হচ্ছে না শুধুমাত্র নোংরা রাজনীতির চাষ হচ্ছে। দ্রুত যদি প্রধান শিক্ষকের এই জটিল সমস্যা সমাধান করা না হয় তাহলে বিদ্যালয়ের অবশিষ্ট থাকা ঐতিহ্য শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, আগেও আমার সঙ্গেও অন্যায় করা হয়েছে বর্তমানেও অন্যায় করা হচ্ছে। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে আমি সোবাহান স্যারের কাছে একটু সময় চেয়েছিলাম কিন্তু স্যার আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিবেন না মর্মে জানতে পেরেছি। কি কারণে সোবাহান স্যার আমার বেতন শীটেও স্বাক্ষর করছেন না সেটাও আমার অজানা। যার কারণে আমি বেতন না পেয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আর প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আমার তালার উপর যেদিন নজরুল স্যার এসে তালা ঝুলিয়েছেন তারপর থেকে আর আমি ওই কক্ষে প্রবেশ করি না। আমিও চাই এমন জটিল সমস্যার দ্রুত আইনগত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান  দীর্ঘ তদন্ত শেষে আমরা একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানোর ফলে শিক্ষক আব্দুস সোবাহান মৃধাকে অধিদপ্তর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পন করেছে। পাশাপাশি বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় সম্পকির্ত আরো কিছু তথ্য চেয়েছে কিন্তু সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন পেশীবলের জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিদ্যালয়ের সকল তথ্যাদি কুক্ষিগত করে রেখেছেন। যার কারণে বিদ্যালয় সম্পর্কিত কোন তথ্যই মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর আইনগত ভাবে এই জটিল বিষয়টির সমাধান করতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন জানান  তিনি সদ্য এই উপজেলায় যোগদানের পর বিদ্যালয়টির এমন জটিল বিষয়টি অবগত হয়েছেন। দ্রুতই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে বিদ্যালয়ের এমন জটিল সমস্যার সুষ্ঠ তদন্ত শেষে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ads

নওগাঁয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ার নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই

আপডেট সময় : ১২:৩৮:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

নওগাঁ রাণীনগরনন সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল নিয়ে চলছে টানা হেঁচড়া। এনিয়ে শিক্ষকদের চলছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদানসহ স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপিঠটি। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে চলছে টানা হেঁচড়া। বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবরে গেজেটের মাধ্যমে সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এরপর থেকে শুরু হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলাদলি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঝুলছে একাধিক তালা। ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নজরুল ইসলাম, আব্দুস সোবাহান মৃধা ও জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। এমন কর্মকান্ডের কারণে অনেক আগেই বিদ্যাপিঠটি তার স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ হারিয়ে ফেলায় দিন দিন বিদ্যালয়টি হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থী ও সুনাম। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নও। অপরদিকে শিক্ষকদের এমন নোংরা যুদ্ধে নির্বিকার হয়ে পড়েছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মো: আবু বকর সিদ্দিক। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিলের ৪তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সোবাহান মৃধা। পরবর্তিতে তৎকালীন সাংসদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আমজাদ হোসেনের বড় ছেলের স্ত্রী জুনিয়র শিক্ষক মোরশেদা ২০১৮ সালের ৫এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ সালের উপনির্বাচনে আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপি নির্বাচিত হলে তার ভাগনী জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের ১১তারিখ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত জুন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দ্বন্দ্বটি দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারী ও অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান নয় প্রধান শিক্ষকের চেয়ারটি নিয়ে চাষ হচ্ছে নোংরা রাজনীতির। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বটি সমাধান করে পাঠদানের একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় অভিভাবক ও উপজেলাবাসী। বৈধ কাগজপত্রাদি পর্যালোচনার মাধ্যমে দ্রুত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে জটিলতার নিরসন করে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক পাঠদান ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাণীনগর বাজারের বাসিন্দা ও অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চোখের সামনে যখন দেখি শিক্ষক দ্বন্দ্বের বলি হয়ে প্রিয় বিদ্যাপিঠটির সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন খুবই খারাপ লাগে। রাজনীতি আর ক্ষমতার লোভের শিকার হওয়ার কারণে আজ কোন ভালই আর বিদ্যালয়টির অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে সরকারি হওয়ার আগে কিছু অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টি তার পাঠদানের ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। এমন অবস্থা থেকে যদি দ্রুত স্কুলটিকে উদ্ধার করা না যায় তাহলে এক সময় স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর শূণ্যের কোঠায় চলে আসবে। যদি সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সমস্যা সমাধান না করেন তাহলে স্কুলটিকে বাঁচাতে আমরা অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবো। শিক্ষক মো: নজরুল ইসলাম জানান  তিনি ১৯৯২সালে অত্র বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০০৪সালের ২৮মার্চ প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনিত হন। এরপর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তৎকালীন রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে একটি মামলার কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। এরপর দীর্ঘ ২০বছর আইনী লড়াই শেষে তার পক্ষে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য রায় দেন নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এর বিচারক। গত ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি আদালতের সেই রায়ের কপি বিভিন্ন দপ্তরে দিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান করছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তিনি আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহলের দাবীর প্রেক্ষিতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন। সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে বিদ্যালয়টির এমন পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে তার দায়িত্ব গ্রহণের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুস সোবাহান মৃধা বলেন বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদের দ্বন্দ্ব বিদ্যালয়টিকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে। গত জুন মাসের ৪তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের সহকারি পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দূর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের মাধ্যমে আমাকে জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বসহ আর্থিক লেন-দেনের ক্ষমতা প্রদান করেন। কিন্তু জোরপূর্বক ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের ভাগনী জুনিয়র শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন আমার কাছে দায়িত্বভার বুঝে না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়েছে। আমি বর্তমানে ফেরারী আসামীর মতো বিভিন্ন কক্ষে বসে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিকসহ সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি আরো জানান অধিদপ্তরের আদেশ পাওয়ার পর সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উম্মে তাবাসসুম গত ১০জুলাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে একাধিকবার শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীনকে নির্দেশনা প্রদান করলেও তিনি দায়িত্বভার বুঝে না দেওয়ায় এই পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার জনাব মো: আব্দুস সোবাহান মৃধার কাঝে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করলেও আজ পর্যন্ত শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন তা পালন করেননি বরং পারভীন বিদ্যালয়টি নিয়ে নোংরা ষড়যন্ত্র করেই চলেছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া হচ্ছে না শুধুমাত্র নোংরা রাজনীতির চাষ হচ্ছে। দ্রুত যদি প্রধান শিক্ষকের এই জটিল সমস্যা সমাধান করা না হয় তাহলে বিদ্যালয়ের অবশিষ্ট থাকা ঐতিহ্য শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, আগেও আমার সঙ্গেও অন্যায় করা হয়েছে বর্তমানেও অন্যায় করা হচ্ছে। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে আমি সোবাহান স্যারের কাছে একটু সময় চেয়েছিলাম কিন্তু স্যার আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিবেন না মর্মে জানতে পেরেছি। কি কারণে সোবাহান স্যার আমার বেতন শীটেও স্বাক্ষর করছেন না সেটাও আমার অজানা। যার কারণে আমি বেতন না পেয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আর প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আমার তালার উপর যেদিন নজরুল স্যার এসে তালা ঝুলিয়েছেন তারপর থেকে আর আমি ওই কক্ষে প্রবেশ করি না। আমিও চাই এমন জটিল সমস্যার দ্রুত আইনগত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান  দীর্ঘ তদন্ত শেষে আমরা একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানোর ফলে শিক্ষক আব্দুস সোবাহান মৃধাকে অধিদপ্তর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পন করেছে। পাশাপাশি বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় সম্পকির্ত আরো কিছু তথ্য চেয়েছে কিন্তু সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা পারভীন পেশীবলের জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিদ্যালয়ের সকল তথ্যাদি কুক্ষিগত করে রেখেছেন। যার কারণে বিদ্যালয় সম্পর্কিত কোন তথ্যই মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর আইনগত ভাবে এই জটিল বিষয়টির সমাধান করতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন জানান  তিনি সদ্য এই উপজেলায় যোগদানের পর বিদ্যালয়টির এমন জটিল বিষয়টি অবগত হয়েছেন। দ্রুতই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে বিদ্যালয়ের এমন জটিল সমস্যার সুষ্ঠ তদন্ত শেষে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।